ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ডালাসের চামেলীতে চায়ের কাপে ভোটের ঝড়

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
ডালাসের চামেলীতে চায়ের কাপে ভোটের ঝড় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ডালাস (টেক্সাস) থেকে: আড্ডাটি জমেই ছিলো। চায়ের কাপ ছিলো আর তাতে ভোট নিয়ে আলোচনাও ছিলো।

তবে ছিলো শুধুই ঝড়ের অপেক্ষা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টেক্সাসের ডালাসের রিচার্ডসনে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ চামেলীতে পৌঁছানেরা পর সামান্য উস্কানিতেই সে ঝড় শুরু হলো।

একজন বললেন, হিলারি যদি এবারের নির্বাচনে জয়ী হন তা স্রেফ ট্রাম্পের কারণেই হবেন। আর ট্রাম্প যদি নির্বাচিত হন, তাহলে তাও হবেন স্রেফ হিলারির কারণে।  

এমন একটি বক্তব্য ব্যাখ্যার দাবি রাখে। ফলে সবারই জিজ্ঞাসার চোখ বক্তার দিকে।  

তিনি বললেন, আসলে ট্রাম্প ছাড়া অন্য কোনো রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী যদি হিলারির প্রতিপক্ষ হতেন, হতে পারেন তা জেব বুশ। তাহলে জেব-ই হতেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট। একইভাবে হিলারি না হয়ে অন্য কেউ যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হতেন, হতে পারেন বার্নি স্যান্ডার্স, তাহলে তিনিই হতেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আর প্রাইমারিতে বার্নির জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।  

যিনি বললেন, তিনি বার্নিভক্ত। সুতরাং আগাগোড়া হিলারিভক্ত যিনি বসে ছিলেন টেবিলের উল্টো দিকে, তার ছেড়ে কথা বলার কথা নয়। ফলে তর্কে ঝড় উঠলো। বার্নি সমাজতান্ত্রিক, আমেরিকানরা আর যাই হোক, তাদের দেশটিতে সমাজতন্ত্র চাইবে না, রাশিয়া হোক চাইবে না। বললেন তিনি।  

বক্তা বললেন, বার্নি সমাজতন্ত্রের কথা বলেননি, তিনি সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার আদলে গড়তে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন জার্মানির আদল গড়তে।  

দ্রুত কথা কেড়ে নিলেন অপরজন। বললেন, হু ইজ দ্য ওর্স অব দ্য টু এভিলস তাকেই বর্জন করতে হবে। আর সেই পথে হিলারিকেই মন্দের ভালো মনে করা হচ্ছে। আর তাই আমরা হিলারির পক্ষেই। এ কথায় সায় দিলেন অনেকেই।  

তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র অধপতনে যাচ্ছে! এমন টিপ্পনিতে প্রায় সবাই প্রতিবাদী হলেন। অধপতন নয়, এটি সময়ের প্রভাব। তবে একজন স্বীকার করে নিলেন, একটি জাতি তাকেই নেতা হিসেবে পায় যার সে যোগ্য। যে জাতির ফাউন্ডিং ফাদারসরা গণতন্ত্রের তত্ব রচনা করে গেছেন, বিশ্বের সেরা গণতন্ত্রের গর্ব করা হতো যে দেশকে ঘিরে, যার প্রেসিডেন্টরা অতীতে মানবতার কথা বলেছেন, যারা বিশ্বের অনেক দেশকে পথ দেখিয়েছে, সভ্যতা-ভব্যতার উদাহরণ হয়েছে, সে জাতিই এমন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে- যিনি এই আধুনিকতার যুগেও নারীদের যৌনতার প্রতীক হিসেবেই দেখেন।  

অপরজন বললেন, তিনি নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন না। হিলারিই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। আর তা ৮ নভেম্বর রাতেই জানা যাবে। আর সবশেষ জরিপও বলছে হিলারি চার পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।  

এ পর্যায়ে একজন চড়াও হলেন মিডিয়ার ওপর। মিডিয়াগুলো এবারের নির্বাচনে ব্যাপক অংকে অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। আর মিডিয়াগুলোই এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। যুক্তরাষ্ট্রেতো বটেই, সারা বিশ্বেই এবারের নির্বাচন নিয়ে নানা গসিপ ছাপানো হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে। জরিপের নামে যা হচ্ছে তা তো ভয়াবহ। মিডিয়াগুলো তাদের নিজেদের মতো করেই জরিপ চালাচ্ছে। আর ফলও তাদের নিজেদের মতো বের করে আনছে।  

একজন বললেন, একটি কথা বলি, দেখবেন ৯ নভেম্বর এই সব কিছু শান্ত হয়ে যাবে। এরপর আর কোনো আলোচনাই থাকবে না।  

কিন্তু সে কথায়ও প্রতিবাদ এলো আড্ডার টেবিল থেকেই। বললেন, এমন করে বলে দেওয়া যাবে না, ট্রাম্প হেরে গেলে এবারের নির্বাচন পরবর্তী সময়টিতে এমন পরিস্থিতি দাঁড়াবে, যা আমেরিকা আর কখনোই দেখেনি।  

ভোটে কারচুপি হবে, সে কথা বলে নির্বাচনের ফল না মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই দিয়ে রেখেছেন।  

এ কথায় যখন সায় মিললো, তখন টেবিলে উপস্থিত হলেন ট্রাম্প ভক্ত বাংলাদেশি একজন। ইংরেজি ও চিটাগনিয়ান ছাড়া আর কোনো ভাষায়ই তিনি কথা বলতে জানেন না। চোস্ত ইংরেজিতে তিনি যা বললেন, তাতে মনে হলো ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন পতিতপ্রায় আমেরিকার ত্রাতা। তিনিই উদ্ধার করবেন এই জাতিকে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এমন ত্রাতার আবির্ভাব প্রয়োজন ছিলো।  

এতোক্ষণ যারা অনেক কথা বলছিলেন, তারা কেউ প্রতিবাদ করলেন না, স্রেফ মুচকি হেসে একে একে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লেন। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা প্রায় পৌনে ৭টায়।  

এই আড্ডাবাজরা সবাই আমেরিকান বাংলাদেশি। ডালাস শহরে তাদের সবারই প্রায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। কেউ রয়েছেন সরকারি বড় চাকরি করেন। নুরুল আলম ভাইয়ের চামেলী রেস্তোরাঁয় প্রায় প্রতি বিকেলেই তাদের আড্ডা হয়। ৪টায় শুরু করে জমিয়ে আড্ডা মেরে সাড়ে ৬টার দিকে সবাই চলে যান। শুক্রবার আড্ডা শুরু হয় ৩টা থেকেই।  

এরা হলেন রায়হান চৌধুরী, ইদরিস সুলতান, আলম চৌধুরী, বিটু ভাই, আনসার ভাই, মহিউদ্দিন ভাই প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে

আরও পড়ুন
** আর্লি ভোটের শেষ দিন টেক্সাসে, আমি ভোট দিয়েছি, তুমিও দাও
** নির্বাচনী ভীতি সৃষ্টি করছে ট্রাম্প ক্যাম্পেইন
** জয়ের পথেই হাঁটছেন হিলারি, বললেন আজিজ আহমদ
** রশিদ মালিক হবে একটি পরিবর্তনের নাম, প্রত্যাশা নিউইয়র্কে
** কংগ্রেসম্যান প্রার্থী রশিদ মালিকের জন্য তহবিল সংগ্রহ নিউইয়র্কে
** সব সম্পাদক এক মঞ্চে, হিলারির পক্ষে অনন্য বাংলাদেশি আয়োজন
**ভূত নেমেছে শহরে! বয়েছে ক্যান্ডির ঝড়
** কোমে বোমায়ও হিলারি অটল, অপ্রতিরোধ্য
** শ্বেতভবনের বাসিন্দা কে হবেন? কে যোগ্য!
** হুমাকে নিয়ে সংকটে হিলারি!
** হিলারিকে ভোট দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটনের বাংলাদেশি কমিউনিটি
** নির্বাচনী জরিপের চড়াই-উতরাই, কনফিউজড অনেকেই​
** নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে
** আর্লি ভোটে আর্লি তুষারপাত, মূল ভোটে কি হবে!
** মুসলিম ডেমোক্র্যাটরা সক্রিয়, রয়েছেন বাংলাদেশিরাও
** বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা
** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র‌্যালি রোববার
** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক​
** বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!​
** অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
**
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।